উপযুক্ত মাটি কীভাবে তৈরি করবেন?
Nerium Red সব ধরণের মাটিতেই ভালো হয়। কিন্তু গোড়ায় জল জমা সে একদম পছন্দ করে না। টবে এই জল জমার সমস্যা যাতে কোনমতেই না-হয়, তার জন্য জৈবসারসমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ মাটিতে এই গাছ করতে হবে। এই ধরণের মাটি তৈরি করতে এক ভাগ এঁটেল মাটি, দু’ভাগ সাদা মিহি বালি, এক ভাগ এক বছরের পুরনো গোবর সার বা পাতাপচা সার বা ভার্মি কম্পোস্ট একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নেবেন (বাড়িতে পুরনো দোআঁশ মাটি থাকলে তার সঙ্গে সামান্য পরিমাণ বালি এবং আগের বলা পরিমাণে জৈবসার মিশিয়ে নিলেই হবে)। তারপর এর সঙ্গে প্রতি টবের হিসেবে দেড় চা-চামচ সাফ ফাঙ্গিসাইড, এক চামচ নিমখোল, এক চামচ হাড়গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে নিলেই করবীর জন্য এক্কেবারে আদর্শ মাটি তৈরি হয়ে যাবে। এই মাটি আপনি নতুন চারা বসানোর জন্য এবং রিপটিং-এর জন্য ব্যবহার করবেন।
কেমন টবে, কীভাবে চারা বসাবেন?
Nerium Red গাছ যথেষ্ট কষ্টসহিষ্ণু একটি গাছ। যে-কোন পরিবেশের সঙ্গে সহজেই মানিয়ে নেয়। ফলত, বাজার থেকে আনার পর পরই এই গাছের পটিং করা যায়। এই গাছ প্রয়োজনের তুলনায় ছোট টব পছন্দ করে, এর রুট বাউন্ড তাড়াতাড়ি হয় না। হলেও অসুবিধে নেই, এই অবস্থাটাকে গাছ এনজয় করে এবং তার মধ্যেই যথেষ্ট ফুল দিয়ে যায়। তাই চারাটিকে প্রথমবার বসানোর সময় আট ইঞ্চির টবেই বসাবেন। ড্রেনেজ সিস্টেম ঠিক রেখে টবের আশিভাগ তৈরি করা আদর্শ মাটি দিয়ে ভর্তি করে ঠিক মধ্যিখানে গর্ত বানিয়ে তাতে হাফ চামচ এপসম সল্ট সম্ভব হলে ছড়িয়ে দেবেন (সম্ভব না-হলে দরকার নেই), তার ওপর চারাটি বসিয়ে চারপাশ ভালো করে চেপে মাটি দিয়ে দেবেন। তারপর টবের কানা ভর্তি করে জল দিয়ে চার-পাঁচ দিন সম্পূর্ণ ছায়ায় টবশুদ্ধ গাছটি রেখে, তারপর রোদে দেবেন।
কেমন রোদে রাখবেন? জল ও অন্যান্য খাবার কী পরিমাণ দেবেন?
রোদঃ Nerium Red রোদ খুব ভালোবাসে। কমপক্ষে ছ’-সাত ঘন্টা রোদে এই গাছ ভালো ফুল দেয়। গরম হোক বা বর্ষা এই গাছ সারাদিনের রোদ এনজয় করে। কমপক্ষে পাঁচ ঘন্টার রোদ এই গাছের চাই-ই-চাই ; নইলে কিন্তু এই গাছ একেবারেই ভালো ফুল দেবে না।
জলঃ মাটি যেহেতু বেলে-দোআঁশ, সেহেতু সারা গ্রীষ্মে সকালে গাছে জল দিলেও বিকেলে মাটি শুকিয়ে যাবে; তাই এই সময় দু’বেলা জল দেবেন। বছরের অন্যান্য সময় ওপরের মাটি শুকোলে তবেই টবে জল দেবেন, নতুবা দেওয়ার দরকার নেই। মনে রাখবেন, এই গাছ অতিরিক্তি জল পছন্দ করে না। তাতে আবার গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। তাই বুঝে বুঝে যতটুকু দরকার, ততটুকুই জল দেবেন।
অন্যান্য খাবারঃ করবী গাছে খুব বেশি খাবার দেবার প্রয়োজন হয় না। দশদিন অন্তর খাবার হিসেবে এই গাছকে সরষের খোলপচা জল পাতলা করে দিয়ে যাবেন। কমপক্ষে তিনদিন সরষের খোল পচাবেন হাফ লিটার জলে এক মুঠো খোল দিয়ে। এবার এই পচানো খোলজলের সঙ্গে আরও তিন লিটার জল মিশিয়ে সেই জল যতটা প্রয়োজন রঙ্গনের টবে দেবেন; বাকিটা আপনার বাগানের অন্যান্য গাছে দেবেন বা বোতলে ভরে জমিয়ে রেখে দেবেন পরের বারের জন্য। সরষের পরিবর্তে বাদাম খোল দিতে চাইলে ঐ একইভাবে দেবেন; তবে এক্ষেত্রে শুধু একদিন পচাবেন। এই বাদামখোল বা সরষে খোলের সঙ্গে অল্টার করে দশদিন অন্তর টব প্রতি দেড় চা-চামচ উনিশ:উনিশ:উনিশ বা কুড়ি:কুড়ি:কুড়ি এনপিকে রাসায়নিক গাছের গোড়া থেকে দূরে হালকা ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে দিয়ে মাটি খুঁচিয়ে দেবেন। ব্যস, এটুকু নিয়মিত দিয়ে গেলেই গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, ফুল দেবে।
প্রচুর ফুল পেতে অত্যন্ত আবশ্যিক পরিচর্যা কোনটি?
ক. গাছে নিয়মিত খাবার দেবার পাশাপাশি কুড়ি দিন অন্তর এক চা-চামচ লাল পটাশ গাছের গোড়া থেকে দূরে হালকা ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে দিয়ে মাটি খুঁচিয়ে দেবেন।
খ. গাছের স্বাস্থ্য ভালো, ফুলের সিজন চলছে অথচ গাছ ফুল দিচ্ছে না, এমন অবস্থা হলে লাল পটাশ যেমন দিচ্ছেন দিয়ে যাবেন, তার সঙ্গে জল একটু টান করে দেবেন। অর্থাৎ মাটি প্রায় খটখটে হয়ে শুকিয়ে এসেছে, এই অবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য কম জল দেবেন। এভাবে কিছুদিন ট্রিটমেন্ট চালালে গাছ অবশ্যই ফুল দেবে।
গ. গাছ ফুল দেওয়ার পর থোকার ফুল শুকিয়ে ঝরে গেলে বৃতিগুলো কেটে দেবেন। পুরো থোকা শেষ হয়ে গেলে থোকার গোড়াটা অবশ্যই কেটে ফেলে দেবেন। এটা নিয়মিত করলে গাছে নতুন শাখা বাড়ে, ফুলও বেশি পাওয়া যায়। কেননা, এই গাছে নতুন শাখার মাথাতেই কেবল ফুলের কলি আসে।
ঘ. মাসে একবার টবের মাটির ওপর উঠে আসা শেকড়গুলো স্টিলের কাঁটাচামচ বা নিড়ানি দিয়ে ইঞ্চি দুয়েক মাটির ভেতর পর্যন্ত খুঁড়ে ছিঁড়ে দেবেন। তারপর সেই মাটি তুলে ফেলে এক মুঠো বেলে-দোআঁশ মাটি, এক মুঠো হাড়গুঁড়ো এবং এক মুঠো কম্পোস্ট সার একসঙ্গে মিশিয়ে সেই মাটি ফেলা অংশটা ভরাট করে দেবেন।
ঙ. খাবার দেবার তিনদিনের মাথায় এক লিটার জলে পঁচিশ ফোঁটা মিরাকুলান মিশিয়ে ভালো করে স্প্রে করে দেবেন মাসে একবার।
গাছকে রোগবালাই ও পোকামাকড় থেকে বাঁচানোর উপায় কী?
রোগবালাই করবীর তেমন নেই। দুটো পোকা কেবল তাকে জ্বালিয়ে মারে। এক, মিলিবাগ। এই পোকা গাছে আক্রমণ করলে এক লিটার জলে যে-কোন কোম্পানির শ্যাম্পু তিন এমএল বা যে-কোন ডিটারজেন্ট হাফ চা-চামচ বা ইমিডাক্লোরোপিড-জাতীয় কীটনাশক তিন গ্রাম ভালো করে মিশিয়ে মেঘমুক্ত দিনে স্প্রে করে দেবেন পর পর দু’দিন, তাতেই কাজ হয়ে যাবে। দুই, শিং-ওয়ালা সবুজ রঙের শুঁয়োপোকার মতো লম্বাটে পোকা। পাতাখোর লার্ভাজাতীয় এই পোকাগুলো সহজে চোখে দেখা যায় না; লুকিয়ে থেকে গাছের কচিপাতা ও ডগাগুলো খেয়ে গাছের দফারফা করে। পাতার তলা থেকে খুঁজে খুঁজে ওদের ধরে ধরে মেরে ফেলা যায়। আবার ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল ও লাম্বডাসিহ্যালোথ্রিন-জাতীয় কীটনাশক এক লিটার জলে পাঁচ থেকে ছ’ফোঁটা মিশিয়ে একবার স্প্রে করেও ওদের নিকেশ করা যায়।
Reviews
There are no reviews yet.